Apon Aloy Obiram

ব্রহ্মাস্ত্র: বলিউড ইতিহাসের সর্বোচ্চ বাজেটেরছবির অন্য রকম অভিজ্ঞতা

0 ১,৪৩৮

প্রথমেই বলে নিচ্ছি, ‘ব্রহ্মাস্ত্র’ বড় পর্দার ছবি। বড় পর্দায় না দেখলে এ ছবির মজা পুরোটা পাওয়া যাবে না। প্রায় ১০ বছর ধরে একটু একটু করে এই ‘ব্রহ্মাস্ত্র’ তৈরি করেছেন পরিচালক অয়ন মুখার্জি। ২০০৪ সালে মুক্তি পাওয়া স্বদেশ ছবিতে ভগ্নিপতি আশুতোষ গোয়ারিকড়ের সহকারী হিসেবে যে বাঙালি তরুণের চলচ্চিত্রযাত্রা শুরু, ৪০-এর আগেই বলিউড ইতিহাসের সর্বোচ্চ বাজেটের ছবির কান্ডারি হলেন তিনি। ভাবা যায়!

‘ব্রহ্মাস্ত্র’ মুক্তির আগেই বাজেট ও কাস্টিং নিয়ে কত আলোচনা। বলিউডের স্মরণকালের সর্বোচ্চ বাজেটের এ ছবিতে কী আছে? মিথ? অ্যাকশন? প্রেম? অ্যাডভেঞ্চার না ফ্যান্টাসি?
সে আলোচনায় যাওয়ার আগে ছোট করে গল্পটার একটু আভাস দিয়ে রাখলে মনে হয় ভালো হবে। মুম্বাইয়ের এক অনাথ আশ্রমে বড় হয়েছে শিবা (রণবীর কাপুর)। এখন সে ডিজে। এক উৎসবে বাঙালি ধনীর দুলালী ইশার (আলিয়া ভাট) সঙ্গে পরিচয়। প্রথম দেখাতেই প্রেম। এ রাতেই শিবা অনুভব করে, তার কোনো অলৌকিক শক্তি আছে। এমনকি আগুনও তাকে পোড়াতে পারে না। স্বপ্নেও সে অনেক কিছু দেখতে পায়। এমনই একটা স্বপ্নে সে বৈজ্ঞানিক মোহন ভার্গবের (শাহরুখ খান) হত্যাকাণ্ড প্রত্যক্ষ করে। নিজ বাড়ির বারান্দায় তাকে হত্যা করে জুনুন (মৌনী রায়)। তার একটাই লক্ষ্য, তিন টুকরা হয়ে যাওয়া ‘ব্রহ্মাস্ত্র’ খুঁজে বের করা। এই তিন টুকরাকে এক করতে পারলে পুরো বিশ্বকেই কবজা করতে পারবে জুনুন ও তার গুরু ব্রহ্মদেব। ব্রহ্মাস্ত্রের তিন টুকরা খুঁজে বের করতে তাই মরিয়া জুনুন।

আবার শিবা স্বপ্নে দেখে যে খ্যাতনামা চিত্রকর আনিশ শেঠিকে (নাগার্জুন) হত্যা করতে যাচ্ছে জুনুন। ব্রহ্মাস্ত্রের একটা টুকরা আছে এই চিত্রকরের কাছে। আনিশকে বাঁচাতে শিবা আর ইশা বারানসি যাত্রা করে। বাকিটা জানতে হলে ছবি দেখতে হবে।
প্রেমই সবচেয়ে বড় অস্ত্র, প্রেমের শক্তিই হলো প্রকৃত ব্রহ্মাস্ত্র—প্রায় ৪১০ কোটি রুপির বাজেটে নির্মিত ‘ব্রহ্মাস্ত্র: পার্ট ওয়ান–শিবা’র এটাই বক্তব্য। শুরুর মিনিট দশেক মনে হবে, ছবির নায়ক শাহরুখ খান নাকি নাগার্জুন? সিনেমা হলভর্তি দর্শকের করতালি আর শিসের শব্দ বলে, ‘বয়কট’ শব্দটি এখানে পাত্তা পায়নি। নব্বইয়ের দশকের শাহরুখ, দক্ষিণের নাগার্জুনের জনপ্রিয়তা এতটুকু কমেনি।

যতক্ষণ শাহরুখ, নাগার্জুন পর্দায় ছিলেন, দর্শকের উল্লাসও ছিল দেখার মতো। দর্শকদের অনেকেই বলেছেন, ‘শাহরুখ ছাড়া এই চরিত্রে আর অন্য কাউকে মানাত না। শাহরুখ খানের ক্যামিও এই ছবির গ্ল্যামার আরও বাড়িয়েছে।’ এরপর হালের তারকা রণবীর কাপুর ও আলিয়া ভাট এসে জায়গা করে নেন। একসময় অমিতাভ গল্পটা এগিয়ে নিয়ে যান।

অভিনয়ের কথা যদি বলতে হয়, তবে ব্রহ্মাস্ত্র বেশ ভালো নম্বরে এগিয়ে থাকবে কাস্টিং নিয়ে। যদিও রণবীর ছাড়া অন্যদের তেমন ব্যবহার করা হয়নি। তবে রণবীরের অভিনয় মাঝেমধ্যে মনে হয়েছে সঞ্জয় দত্তের তরুণ সংস্করণ। হয়তো সঞ্জয় দত্তের বায়োপিক সঞ্জু শুটিংয়ের কাছাকাছি সময়ে হয়েছে এ ছবির কাজ, প্রভাবটা রয়ে গেছে।

শাহরুখ খান ও নাগার্জুন নামের প্রতি সুবিচার করেছেন। দুজনই বড় দলের মারকুটে ওপেনিং ব্যাটসম্যানের মতো দারুণ পিটিয়েছেন! যতটা পেটাতে পারেননি অমিতাভ বচ্চন। প্রায় শেষ দৃশ্য পর্যন্ত থাকলেও তাঁকে মনে হয়েছে অচেনা মাঠে খেলছেন। আলিয়া ‘এ প্লাস’ না পেলেও ‘এ’ পেতেই পারেন। নেতিবাচক চরিত্রে মৌনী রায় ‘নবীন’ হিসেবে ভালো করেছেন। ডিম্পল কাপাডিয়া সে অর্থে অভিনয়ের সুযোগ পাননি। ‘ব্রহ্মাস্ত্র’ ছবিতে শিবার মায়ের চরিত্রে দীপিকা পাড়ুকোনকে একঝলক দেখা গেছে। তাঁকে হয়তো পরের পর্বগুলোয় বিস্তারিত দেখা যাবে।

নবীন, তরুণ, প্রবীণ—নানা বয়সী দর্শকের উপস্থিতি হলে। ১৬৭ মিনিটের এ ছবি ঝাঁ-চকচকে ভিএফএক্স দিয়ে পুরোটা সময় দর্শকদের আসনে বসিয়ে রাখতে সক্ষম। গল্পের বাঁকে বাঁকে নানান রহস্য আর রোমাঞ্চ। বলিউডে এই প্রথম ভারতীয় পৌরাণিক কাহিনির সঙ্গে আধুনিক প্রযুক্তির মেলবন্ধন ঘটিয়ে নির্মাণ করা হয়েছে ভিন্ন স্বাদের এক ছবি। প্রযুক্তিগত দিক থেকে হলিউডের ছবির চেয়ে কোনো অংশে কম নয় ‘ব্রহ্মাস্ত্র’। হিন্দি সিনেমায় প্রথমবার এত বড় মাত্রায় ভিএফএক্সের ব্যবহার করা হয়েছে। অনেক দর্শকই ছবি শেষে বলাবলি করছিলেন, ছবির নায়ক ভিএফএক্স। সব মিলিয়ে ভারতীয় দর্শকদের পাশাপাশি বসে এক অন্য রকম অভিজ্ঞতা হলো।

তবে আরেকটি কথাও না বললেই নয়। ছবির গ্রাফিকস বা ভিএফএক্স যতটা শক্তিশালী, গল্প ততটাই দুর্বল। শেষ ১৫ মিনিটে ভিএফএক্স অতিরিক্ত মাত্রায় ব্যবহার করা হয়েছে। বিরতির আগপর্যন্ত ছবির এক দুরন্ত গতি ছিল। কিন্তু বিরতির পর সেই গতিতে কোথাও ছন্দপতন হয়। ছবির সংলাপও দুব৴ল বলছিলেন আমন্ত্রিত চলচ্চিত্র সমালোচকেরা। অমিতাভ ভট্টাচার্যের লেখা, প্রীতমের সুরে অরিজিৎ সিংয়ের গাওয়া গানগুলো বেশ লেগেছে।

বলে রাখা ভালো, ‘ব্রহ্মাস্ত্র’ ছবিটি তিনটি ভাগে নির্মাণ করা হয়েছে। এই ছবির প্রথম ভাগের শেষ প্রান্তে এসে নির্মাতারা এর দ্বিতীয় ভাগের কথা ঘোষণা করেছেন।

You might also like
Leave A Reply

Your email address will not be published.